বিদায় হজ
দশম হিজরি। আরবদেশের অনেকেই তখন ইসলাম ধর্ম গ্রহণ করেছেন। মহানবি হযরত মুহাম্মদ (স) মানুষের কাছে পৌঁছে দিয়েছেন সত্য, ন্যায় ও মানবতার বাণী। ইসলামের এ বাণী তখন দিকে দিকে ছড়িয়ে পড়েছে।
দশম হিজরির হজের সময় এসে গেল। মহানবি হযরত মুহাম্মদ (স) অন্তরের গভীরে কাবার আহ্বান অনুভব করলেন। তিনি স্থির করলেন সাহাবিদের সঙ্গে নিয়ে হজ পালন করবেন। এই সংবাদ চারদিকে দ্রুত ছড়িয়ে পড়ল ।
যিলকাদ মাস। নবিজির (স) কাছে সমবেত হয়েছেন হাজার হাজার মানুষ। তাঁদের ইচ্ছা নবিজির (স) সঙ্গে হজ পালন করবেন। যিলকাদ মাসের শেষ দিকে মহানবির (স) সঙ্গে তাঁরা মক্কার পথে যাত্রা করলেন। যাঁরা তাঁকে কখনও দেখেন নি তাঁরাও এই মহামানবকে এক বার দেখার জন্য কাবাশরিফে এলেন ।
আরব দেশের নানা স্থান থেকে সেবার প্রায় দুই লক্ষ মানুষ হজ পালন করতে আসেন। আরাফাতের ময়দানে এত বিপুল সংখ্যক মানুষ দেখে মহানবির (স) মন আনন্দে ভরে গেল। এত মানুষ! এরা সবাই ইসলাম ধর্ম গ্রহণ করেছেন। জাবালে রাহমাত নামক পাহাড়ে দাঁড়িয়ে তিনি সমবেত মানুষের উদ্দেশে ভাষণ দিলেন । হজ উপলক্ষে আরাফাত ময়দানে নবিজির (স) এটিই শেষ ভাষণ। আর তাই এটি বিদায় হজের ভাষণ নামে খ্যাত। মানবজাতি চিরদিন তাঁর এই ভাষণকে গভীর শ্রদ্ধায় স্মরণ করবে।
মহানবি হযরত মুহাম্মদ (স) প্রথমেই আল্লাহর প্রশংসা করলেন। তারপর সমবেত মানুষের দিকে তাকিয়ে তিনি বললেন:
তোমরা আমার কথা মনোযোগ দিয়ে শোন। আজকের এই দিন তোমাদের কাছে পবিত্ৰ । এ মাসটিও তেমনি তোমাদের কাছে পবিত্র। তোমাদের জীবন ও সম্পত্তি তোমাদের পরস্পরের কাছে পবিত্ৰ ।
মনে রেখ, একদিন তোমরা আল্লাহর কাছে হাজির হবে। পৃথিবীতে তোমরা যে কাজ করেছ, আল্লাহ তোমাদের কাছে তার হিসাব চাইবেন ।
তোমাদের ক্রীতদাস-ক্রীতদাসীরাও আল্লাহর বান্দা। তাদের প্রতি নিষ্ঠুর ব্যবহার কর না।তোমরা নিজেরা যা খাবে, তাদেরও তাই খেতে দেবে। নিজেরা যে কাপড় পরবে, তাদেরও তাই পরতে দেবে। কোনো ক্রীতদাস যদি নিজের যোগ্যতায় আমির হয়, তবে তাকে মেনে চলবে। তখন বংশ-
মর্যাদার কথা বলবে না ।
মনে রেখ, সব মুসলমান একে অন্যের ভাই । তোমরা এক ভাই কখনও অন্য ভাইয়ের সম্পত্তি জোর করে দখল কর না ।
কখনও অন্যায় এবং অবিচার কর না । সামান্য পাপ থেকেও নিজেকে দূরে সরিয়ে রাখবে । আজ যারা এখানে আসে নি, আমার উপদেশ তাদের কাছে পৌঁছে দিও। হয়ত এই উপদেশ তারা বেশি করে মনে রাখবে ।
মানুষ নিজের কাজের জন্য নিজেই দায়ী থাকবে। একজনের অপরাধের জন্য অন্যকে দায়ী করা চলবে না ।
আমার বাংলা বই
আরব দেশের নানা স্থান থেকে সেবার প্রায় দুই লক্ষ মানুষ হজ পালন করতে আসেন। আরাফাতের ময়দানে এত বিপুল সংখ্যক মানুষ দেখে মহানবির (স) মন আনন্দে ভরে গেল। এত মানুষ! এরা সবাই ইসলাম ধর্ম গ্রহণ করেছেন। জাবালে রাহমাত নামক পাহাড়ে দাঁড়িয়ে তিনি সমবেত মানুষের উদ্দেশে ভাষণ দিলেন । হজ উপলক্ষে আরাফাত ময়দানে নবিজির (স) এটিই শেষ ভাষণ। আর তাই এটি বিদায় হজের ভাষণ নামে খ্যাত। মানবজাতি চিরদিন তাঁর এই ভাষণকে গভীর শ্রদ্ধায় স্মরণ করবে।
মহানবি হযরত মুহাম্মদ (স) প্রথমেই আল্লাহর প্রশংসা করলেন। তারপর সমবেত মানুষের দিকে তাকিয়ে তিনি বললেন:
তোমরা আমার কথা মনোযোগ দিয়ে শোন। আজকের এই দিন তোমাদের কাছে পবিত্ৰ । এ মাসটিও তেমনি তোমাদের কাছে পবিত্র। তোমাদের জীবন ও সম্পত্তি তোমাদের পরস্পরের কাছে পবিত্ৰ ।
মনে রেখ, একদিন তোমরা আল্লাহর কাছে হাজির হবে। পৃথিবীতে তোমরা যে কাজ করেছ,
আল্লাহ তোমাদের কাছে তার হিসাব চাইবেন ।
তোমাদের ক্রীতদাস-ক্রীতদাসীরাও আল্লাহর বান্দা। তাদের প্রতি নিষ্ঠুর ব্যবহার কর না।
তোমরা নিজেরা যা খাবে, তাদেরও তাই খেতে দেবে। নিজেরা যে কাপড় পরবে, তাদেরও তাই পরতে দেবে। কোনো ক্রীতদাস যদি নিজের যোগ্যতায় আমির হয়, তবে তাকে মেনে চলবে। তখন বংশ-
মর্যাদার কথা বলবে না ।
মনে রেখ, সব মুসলমান একে অন্যের ভাই । তোমরা এক ভাই কখনও অন্য ভাইয়ের সম্পত্তি জোর করে দখল কর না ।
কখনও অন্যায় এবং অবিচার কর না । সামান্য পাপ থেকেও নিজেকে দূরে সরিয়ে রাখবে । আজ যারা এখানে আসে নি, আমার উপদেশ তাদের কাছে পৌঁছে দিও। হয়ত এই উপদেশ তারা বেশি করে মনে রাখবে ।
মানুষ নিজের কাজের জন্য নিজেই দায়ী থাকবে। একজনের অপরাধের জন্য অন্যকে দায়ী করা চলবে না ।
১. শব্দগুলো পাঠ থেকে খুঁজে বের করি। অর্থ বলি।
হিজরি হজ মহানবি কাবাশরিফ আরাফাত উপাসনা ভাষণ বান্দা আমির ক্রীতদাস যিলকাদ
২. ঘরের ভিতরের শব্দগুলো খালি জায়গায় বসিয়ে বাক্য তৈরি করি।
আরাফাত ক্রীতদাস কাবাশরিফ মহানবি হিজরি হজ
ক. দশম……………….হজের সময় এসে গেল ।
খ. তাঁদের ইচ্ছা নবিজির (স) সঙ্গে……………পালন করবেন।
গ. ………………..হযরত মুহাম্মদ (স) প্রথমেই আল্লাহর প্রশংসা করলেন ।
ঘ. যাঁরা তাঁকে কখনও দেখেন নি তাঁরাও এই মহামানবকে একবার দেখার জন্য…………….এলেন।
ঙ. …………………….ময়দান থেকে লক্ষ লক্ষ কণ্ঠে ধ্বনিত হল, “হ্যাঁ, আপনি পেরেছেন।’
চ. কোনো………………যদি নিজের যোগ্যতায় আমির হয়, তবে তাকে মেনে চলবে।
৩. প্রশ্নগুলোর উত্তর বলি ও লিখি।
ক. হিজরি কোন সালে বিদায় হজ অনুষ্ঠিত হয়?
খ. আরাফাত-ময়দানে লক্ষ লক্ষ মানুষ দেখে নবিজির (স) মনের অবস্থা কেমন হয়েছিল?
গ. মহানবি (স) তাঁর ভাষণে ক্রীতদাস-ক্রীতদাসী সম্পর্কে কী বলেছেন ?
ঘ. ধৰ্ম সম্পর্কে মহানবি (স) কী উপদেশ দিয়েছেন?
ঙ. কোন চারটি কথা নবিজি (স) বিশেষভাবে মনে রাখতে বলেছেন?
চ. তিনি আমাদের কাছে কোন দুইটি জিনিস রেখে গেছেন?
৪. ঠিক উত্তরটিতে টিক (√) চিহ্ন দিই।
ক. বিদায় হজ কোথায় অনুষ্ঠিত হয়েছিল?
১. মদিনায় ২. মক্কায়
৩. আরাফাতের ময়দানে 8. জেদ্দায়
খ. আরাফাতের ময়দানে কত লক্ষ মানুষ হজ পালন করতে আসেন?
১. প্রায় এক লক্ষ ৩. প্রায় তিন লক্ষ
২. প্ৰায় দুই লক্ষ ৪. প্রায় চার লক্ষ
গ. হযরত মুহাম্মদ (স) কাদের প্রতি নিষ্ঠুর আচরণ করতে নিষেধ করেছেন?
১. সৈন্যদের ২. সাহাবিদের
৩. আলেমদের ৪. ক্রীতদাস-ক্রীতদাসীদের
ঘ. মহানবি (স) কয়টি কথা বিশেষভাবে মনে রাখতে বললেন?
১. দুইটি ২. চারটি
৩. ছয়টি ৪. আটটি
ঙ. মহানবির (স) চোখ-মুখ আনন্দে উজ্জ্বল হয়ে উঠল কেন?
১. মানুষের কাছে আল্লাহর বাণী পৌঁছে দেওয়ার জন্য ২. মক্কা জয়ের আনন্দে
৩. সাহাবিদের নিয়ে হজ পালন করতে পারায় ৪. বিদায় হজের ভাষণে বিপুল সংখ্যক মানুষ দেখে
৫. নিচের বাক্যগুলো এককথায় প্রকাশ করি ৷
যার তুলনা হয় না - অতুলনীয়
যার শত্রু জন্মায় নি - অজাতশত্রু
আকাশে যে উড়ে বেড়ায় - খেচর
বিদেশে থাকে যে - প্রবাসী
যা কষ্টে লাভ করা যায় - দুর্লভ
যা জলে চরে - জলচর
৬. বিরামচিহ্নগুলো চিনে নিই ।
বিরামচিহ্নের নাম চিহ্নের আকৃতি
কমা ,
সেমিকোলন ;
দাঁড়ি ।
জিজ্ঞাসা-চিহ্ন ?
বিস্ময়-চিহ্ন !
বাক্যের অর্থ স্পষ্টভাবে বোঝাবার জন্য বাক্যের মধ্যে বা শেষে আমরা বিরামচিহ্ন ব্যবহার করি। নিঃশ্বাস নেওয়ার জন্যও এই চিহ্নের জায়গায় আমরা থামি।
এবার নিচের বাক্যগুলো পড়ি এবং ঠিক জায়গায় বিরামচিহ্ন বসাই :
এত বিপুল সংখ্যক মানুষ দেখে নবিজির (স) মন আনন্দে ভরে গেল এত মানুষ এরা সবাই ইসলাম গ্রহণ করেছে তাঁর মনে হলো হয়ত এটাই তাঁর জীবনের শেষ হজ।
৭. কর্ম-অনুশীলন।
‘বিদায় হজ’ রচনাটি থেকে শিক্ষণীয় বিষয়গুলো লিখ ।
আরও দেখুন...